প্রকাশিত: ০৭/০৭/২০১৬ ৩:৩৪ পিএম , আপডেট: ০৭/০৭/২০১৬ ৩:৩৮ পিএম

IMG_২০১৬০১২৩_১০৪৮২৫(1) [Max Width 640 Max Height 480]ছবি ও টিভিতে দেখছিলাম ক্যারিবিয়ানের সৌন্দজ্য  ক্রমশ লোভাতুর হয়ে পড়ছিলাম।অসীম সাগরের সাথে দিগন্তে মিশে যাওয়া নীল আকাশের মিতালি যাদের ভালো লাগে তাদের কাছে ঘুরে বেড়ানো চমত্কার একটি জায়গা হতে পারে বাংলাদেশের সর্বদক্ষিণে অবস্থিত ভূখণ্ড ছেঁড়া দ্বীপ। আর দশটা স্থানের মতো এখানে সব সময় পর্যটকদের ভিড়ভাট্টা লেগে না থাকলেও প্রকৃতির সৌন্দর্যে কখনও কমতি পড়ে না। মূলত বাংলাদেশের দক্ষিণে অবস্থিত সেন্টমার্টিন দ্বীপ থেকেও আর খানিকটা দূরে মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন ১০০ থেকে ৫০০ বর্গমিটার আয়তনের বেশ কয়েকটি দ্বীপের সমষ্টিই হলো এই ছেঁড়া দ্বীপ। এমন নীলাভ জলরাশি আর নারকেল বীথি ঘেরা ছোট ছোট ছিমছাম দ্বীপাঞ্চলে নির্বাসনে যাওয়ার জন্য মনটা আঁকুপাঁকু করছিল। দৌড়ঝাঁপ শুরু করলাম, ওখান থেকে ঘুরে আসতে কত টাকা লাগে তা জানা প্রয়োজন। তথ্যাদি হাতে পাওয়ার পর আপাতত ছবি দেখেই তৃষ্ণা মেটানোর সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু মনের ভেতর একটা ভয়াবহ সামুদ্রিক সুন্দরের হাতছানি প্রতিনিয়ত পোড়াতে লাগল। শুনলাম উখিয়া ডিসাইড বনভোজনের আয়োজন করতেছে। কয়েক জন সদস্য এসে জিঙ্ঞাসা করল সেন্টমাটিন য়াবে কি? আমি আর না করিনি .হ্যা যাবো, ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে যেতে পারিনি তো কি হয়েছে? ছবিতে ছেঁড়া দ্বীপ ও সেন্টমাটিনের জলরাশিও তো দেখছি অনেকটা নীল। সারি সারি নারকেল গাছের মুগ্ধতাও কম নয়।গত ২৪.২,২০১১ উখিয়া থেকে রওনা দিলাম সেন্টমাটিনের উদ্দেশ্য যেতে যেতে কত কিছু দেখছি। অবিকল সুন্দরবনের মতো দেখতে একটা দ্বীপের দেখা পেলাম নাফ নদীর পাড়ে। নাম জানলাম, ‘জইল্লার দ্বীপ।’ ডানে তাকিয়ে চোখ ছানাবড়া। কি উঁচু উঁচু পাহাড়ের সারি। নাফ নদীর কোলের এই উঁচু জায়গার নাম, নেটং পর্বত। কিছু দূর যেতে চোখে পড়ল মিয়ানমারের নাসাকা বাহিনীর ক্যান্টনমেন্ট। একদম মিয়ানমার ঘেঁষেই আমরা যাচ্ছি। এ যেন সত্যিই রথ দেখা আর কলা বেচার সারথ্ক আয়োজন। আরও কিছু দূর যাওয়ার পর আশপাশে আর কিছু নেই। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। আমরা এখন সমুদ্রের বুকে। জলের এতো সমাহার দেখে অনিয়ন্ত্রিত আবেগে সবার অবস্থা টালমাটাল। দুই ঘণ্টা পর আমাদের চোখে পড়ল সারি সারি নারকেল গাছ, কেয়ার ঝোপ আর অসংখ্য ট্রলারের খেলা, ছবির মতো। সত্যি যেন ফ্রেমে বাঁধা ছবির মতোই লাগছে সবকিছু। আমরা নামলাম স্বপ্নের সেন্টমাটিনের। ভ্যানে করে যাচ্ছি হোটেলের দিকে। আগেই ওখানে বুকিং দিয়ে রেখেছিলাম। মাঝের রুমে গিয়ে বসলাম। সমুদ্রের ঢেউ এসে আছড়ে পড়ছে সামনে । সারাদিন টইটই করে আমরা সেন্টমাটিন ঘুরে বেড়ালাম। এখানে সেখানে কেয়ার ঝোপ, সারি সারি নারকেল গাছ আর যত্রতত্র ছোট-বড় পাথরের পাশাপাশি ট্রলারগুলোও যেন এ দ্বীপের সৌন্দর্যের অন্যতম অনুষঙ্গ। আমরা হোটেলে ফিরলাম সূর্য ডোবার পর। সবাই ক্লান্ত। খাওয়া-দাওয়ার পর্ শেষ। সবাই ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছে। IMG_২০১৬০১২৩_১০৫০২১(1) [Max Width 640 Max Height 480]আমরা যখন বারান্দায় বসেছি তখন মধ্যরাত। পুরো সেন্টমাটিনের পিনপতন নীরবতা। সমুদ্রের গর্জন ছাড়া আর কোনও শব্দ নেই। ভরা পূর্ণিমার রাত। খা খা জোসনা বুকে নিয়ে সমুদ্রের কি যে মাখামাখি! আহা! মুগ্ধতায় চোখে জল এসে যায়। আমরা নেমে গেলাম রাতের সেন্টমাটিনের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। কিসের আবার ক্যারিবিয়ান? আমাদের এই সেন্টমার্টিন কোনও অংশেই কম নয়। এমন ভরা পূর্ণিমায় সেন্টমাটিনের রূপ যে পরখ করেনি, তার জন্য বৃথা। দিনের ক্লান্তির পর আমাদের ঘুমানোর কথা ছিল। কিন্তু চোখের সামনে পূণিমার রাতের নির্লজ্জ বিবস্ত্র সমুদ্রের এমন ছলাকলা দেখে কার চোখে ঘুম আসে?

পরদিন সকালে ছোটখাটো একটি ট্রলার ভাড়া করে ছেঁড়া দ্বীপ রওনা হলাম। এবার সত্যি সত্যি যাচ্ছি। ট্রলারটা রাখা আছে তীর থেকে বেশ দূরে। আপাতত ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকায় চড়তে হচ্ছে। যদিও স্বচ্ছ পানির নিচে বালুর প্রলেপ দেখতে পাচ্ছি তবুও এমন একটি কাঠের খণ্ডে পাঁচজন আরোহন কম কথা নয়। ট্রলারে উঠলাম। হেলেদুলে ট্রলার চলছে। আস্তে আস্তে দৃষ্টির সীমানা থেকে মিলিয়ে যাচ্ছে সেন্টমাটিন। চোখের সামনে কেবল পানি আর পানি। বাতাসের বেগ বাড়তে শুরু করে, বড় হতে থাকে ঢেউয়ের আকৃতি। মাছ ধরার একটা ছোট্ট ট্রলারের যাত্রী হয়ে আমরা এখন মধ্য সমুদ্রে। এদিক দিয়ে গেলে নাকি তাড়াতাড়ি পৌঁছান যাবে।CIMG2131 [Max Width 640 Max Height 480]

প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার সমুদ্র অভিযান শেষে আমরা এলাম ছেঁড়া দ্বীপে। স্বচ্ছ পানির নিচে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, থোকা থোকা প্রবাল কি অপরূপ সাজে ফুটে আছে। প্রবালের ফাঁক-ফোকরে কত রঙের মাছের ছোটাছুটি। থরে থরে ছোট-বড় পাথর সাজিয়ে রাখা হয়েছে। এগুলোই নাকি প্রবালের খোসা। আর এই খোসাগুলোর উপরেই হাজার হাজার বছর ধরে টিকে আছে আমাদের স্বপ্নের ছেঁড়া দ্বীপ। অল্প সময় হেঁটে বেড়ালেই দ্বীপটা দেখে নেয়া যায়, কিন্তু দু’চারটা কেয়ার ঝোপ আর বেশ কিছু নারকেল গাছ নিয়ে যে ছেঁড়া দ্বীপ নিঃসঙ্গ অবস্থায় তার স্বাতন্ত্র্য মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে তা খুঁটে খুঁটে দেখতে সময় লেগে যায় অনেকটা।

ছেঁড়া দ্বীপে ঘুরে বেড়ানোর পর আমার আর মনে হয়নি আমাকে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে যেতে হবে। আমি বারবার এখানেই আসব। জীবনের হিসাব-নিকাষ ভুলে গিয়ে সুযোগ পেলেই এখানে, এই ছেঁড়া দ্বীপে চলে আসব। উদার আকাশের নিচে; নীল সমুদ্রের কোলে, প্রবালের খোসার ওপর বসে বসে নিঃসঙ্গ ছেঁড়া দ্বীপের সঙ্গে নিজের নিঃসঙ্গতাকে একাকার করে কাটিয়ে দেব ব্যক্তিগত সকাল-দুপুর আর সন্ধ্যাবেলা। আমি আবারও আসব। আমাকে আসতেই হবে। অপেক্ষায় থেকো প্রিয় ছেঁড়া দ্বীপ।

লেখক

ওবাইদুল হক আবু চৌধুরী

সম্পাদক

www.ukhiyanews.com

ukhiyanews@gmail.com

 

পাঠকের মতামত

নতুন রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোই যখন বড় চ্যালেঞ্জ!

মিয়ানমারের তিনটি প্রধান এথনিক রেজিস্ট্যান্ট গ্রুপ—তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল এলায়েন্স (এমএমডিএ) এবং ...

একটি ফুল—

একটি ফুল, একটি ফুলের জন্যে কতো নিষ্পাপ গাছ প্রাণ হারালো, এই বর্বর শুকোনের দল বারংবার ...